রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
ঢাকা রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
The Daily Post

ফরিদপুরে পাউবোর জমি দখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ 

ফরিদপুর প্রতিনিধি 

ফরিদপুরে পাউবোর জমি দখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ 

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর মৌজায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) বেরিবাঁধের জন্য সংরক্ষিত জমি কৃষিকাজের জন্য লিজ নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে চারতলা ফাউন্ডেশনের একটি দোতলা ভবন। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (ওয়াবদা) বেড়িবাঁধ সড়কের সাথে এমনভাবে এই দোতলা বিল্ডিং করা হয়েছে যা সামনে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এর পিছনে দোতলা বিল্ডিং করা হয়েছে। সামনের অংশে সড়কের পাশে সেমিপাকা টিনের বড় বড় চারপাঁচটি দোকান ঘর বানিয়ে ভাড়া দেয়া হয়েছে। দেখলে মনে হবে সেগুলো অস্থায়ী কোন স্থাপনা।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ২০ মিটার লম্বা কংক্রিটের তৈরি ছাদের নিচে রীতিমতো একটি বাড়ি তৈরি করেছে পাউবোর অগোচরেই। একটু একটু করে দখল নিতে নিতে পাউবোর ওই বেড়ীবাঁধের জমির মালিকানা দাবি করেছেন এক সৌদিফেরত ব্যক্তি। 

সাংবাদিকদের কাছে পাউবোর বেড়ীবাঁধের উপরে তৈরি বিল্ডিং তার নয় বলে প্রথমে এড়িয়ে গেলেও পরে তিনি বলেন, পাউবোর ওই সংরক্ষিত জমি মালিকানা সূত্রে তার ক্রয় করা সম্পত্তি। 

তবে পাউবো সূত্র জানিয়েছে, সৌদিফেরত ওই ব্যক্তি কৃষিকাজের জন্য পাউবো থেকে ১১ শতাংশ জমি লিজ নেন কয়েকবছর আগে। তবে লিজের শর্ত লঙ্ঘন করায় তার লিজ নবায়ন করা হয়নি। তিনি নতুন করে আরো জমি লিজ নেয়ার আবেদন করেছেন।

প্রতিবেশী কাজী মঈনুল আলম বলেন, ২০০৫ সাল থেকে এই পুকুরের জমি আমাদের লিজ নেয়া। কদিন আগে এক সৌদিফেরত ব্যক্তি সেখানে ঘর তুলেছেন। অভিযোগ পেয়ে অবদার লোকেরা এসেছিলেন সরেজমিনে দেখতে। 

ওই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের মেম্বার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, অনেক আগে ৬২ সালে এই জমি ব্যক্তি মালিকানায় ছিলো। পরে অবদা কিনে নিছে। এখন অবদার। তবে ওই সৌদিফেরত ব্যক্তি কিভাবে কিনেছে তা জানা নেই। 

নথিপত্রে দেখা যায়, ২০০৯ সালে দুটি দলিলে সৌদিফেরত ওই ব্যক্তি পাঁচজন ব্যক্তির নিকট থেকে ২ একর ৫৩ শতাংশ জমির মধ্যে পৌনে ৮ শতাংশ করে জমি রেজিস্ট্রি করেন। দলিলে দাতারা হলফনামায় বলেন, এই সম্পত্তি সরকারি খাস/অর্পিত বা পরিত্যক্ত সম্পত্তি নয় বা অন্য কোনভাবে সরকারের উপর বর্তায় নাই। 

তিনি ২০১৩ সালে গোপালপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে ৮টি দাগে ১ একর ৫ শতাংশ ও ২ এক ৯৬ শতাংশ জমি বাবদ ১৪২০ বঙ্গাব্দের ২ টাকা খাজনা পরিশোধ রসিদ সংগ্রহ করেন। ২০২২ সালে তিনি ওই মৌজার ৮৬২ ও ৮৬৩ নং দুটি দাগের ৮ শতাংশ জমি লিজের আবেদন করেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে। 

পাউবোর নথিতে দেখা যায়, ২৭৮/৬১-৬২ এল.এ. কেসের মাধ্যমে ওই দুটি দাগের ৩৬ শতাংশ জমিসহ ১১ একর ১১ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়। বেরিবাঁধ নির্মাণের পর ওই দুটি দাগের ২২ শতাংশ জমি প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। 

২০০৫ সালে কৃষিকাজের জন্য সাময়িক বা বাৎসরিক ভিত্তিতে লিজ দেয়ার সুপারিশের পর মঈনুল পাউবোর ওই লিজের অন্যতম শর্ত হলো, লিজি শুধুমাত্র কৃষিকাজেই জমি ব্যবহার করতে পারবেন। কোনপ্রকার অবকাঠামো বা স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।

এ বিষয়ে গোপালপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইনামুল হাসান বলেন, এটি অবদার জায়গা, আবার ব্যক্তি মালিকানায় কেনা সেটিও জানি। এটি নিয়ে আমরা সালিসও করে দিয়েছি। দুই পক্ষের লিজ নেয়া। হয়তো কমবেশি। অবদা থেকে লোক এসে দেখে গেছে। 

এব্যাপারে জানতে চাইলে সৌদিফেরত ব্যক্তি বলেন, আমার মালিকের নামে রেকর্ড আছে। এসএ রেকর্ড মতে আমি কিনিছি এবং বাড়ি করে ভোগদখলে আছি। বিএস রেকর্ড হয় নাই। নকশা করে গেছে।

এই জমি পাউবোর অধিগ্রহণ করা কিনা? জবাবে তিনি বলেন, "আমি জানি কিছুটা তাদের আছে, সেটাও ঠিক। আমার ভাই মিনিস্টারিতে আছে। জমিটা সেই ঠিক করছে। সরকারিভাবে যেটা করতে হয়। 

এ বিষয়ে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, গোপালপুর বাজারে পাউবোর লিজকৃত জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের একটি অভিযোগ পেয়েছি এবং দাপ্তরিকভাবে একটি কমিটি করা হয়েছে। সরেজমিনে তদন্তে যদি কেউ অবৈধ দখল করে থাকে তাহলে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় তাকে উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা নেবো। আমরা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশের সহায়তায় তাকে আমাদের লিজকৃত সম্পদ থেকে উচ্ছেদ করে দিব।

টিএইচ